Saturday, April 23, 2022

লাইলাতুল ক্বদরে যে সকল দোয়া সমূহ আমরা পড়তে পারি

ফজিলাতের রাত লাইলাতুল কদরএ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার মুক্তির জন্য নাজিল করেছেন কুরআনুল কারিমআর কুরআনুল কারিমে রয়েছে ক্ষমা প্রার্থনার অনেক দোয়াআবার এ রাতে বিশেষ দোয়া পড়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামক্ষমা প্রার্থনার সে দোয়াগুলো আজকে আমরা শিখব, ইনশাআল্লাহ।

লাইলাতুল ক্বদরের বিশেষ দোয়া

রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর যে কোনো একটি রাতে লাইলাতুল কদরসংঘটিত হয়রোজাদার মুমিন মুসলমান এ রাত পাওয়ার জন্য শেষ দশক ইতেকাফে অতিবাহিত করেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমৃত্যু ইতেকাফ করেছেনএ রাতে বিশেষ একটি দোয়া পড়ার কথা বলেছেনতাহলো-

আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল ক্বদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনতুমি বলবে-

اللّٰهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন(মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

সুতরাং প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। আর এই হাদীসের আলোকে ক্ষমা প্রার্থণার যে দোয়াগুলো আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন সেগুলো বেশি বেশি পড়া।এমন কিছু দোয়া নিচে উল্লেখ করা হল-

 

পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ক্ষমার দোয়া সমূহ

ক্ষমা প্রার্থনার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে অনেক দোয়া তুলে ধরেছেনযা নামাজের সেজদা, তাশাহহুদসহ সব সময় পড়া যায়দোয়াগুলো হলো-

 رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرّٰاحِمِيْنَ

অনুবাদ: হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)

 رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرّٰاحِمِيْنَ

অনুবাদ: 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছিঅতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম করতুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)

 رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

অনুবাদ: '(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন' (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

 رَبَّنَاۤ إِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অনুবাদ: হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর(সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)

 رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

অনুবাদ: হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিযদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো(সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

 رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

অনুবাদ: হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর' (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)

 سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

অনুবাদ: আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলামহে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুনআপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)

 

 رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَالاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ  وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْلَنَا وَارْحَمْنَاۤ أَنْتَ مَوْلاَنَا  فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

অনুবাদ: 'হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো নাআমাদের পাপ মোচন করুনআমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুনতুমিই আমাদের প্রভু সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর ' (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)

 رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ

অনুবাদ: হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

 رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

অনুবাদ: হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিনআমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিনআমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুণ' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)

 رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

অনুবাদ: 'হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করুনআমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, লাইলাতুল ক্বদরে প্রিয় নবি ঘোষিত বিশেষ দোয়াসহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ক্ষমা প্রার্থনার দোয়াগুলো সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার  পর নিজেদের গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি পড়াআর তাতেই মহান আল্লাহ রোজাদার মুমিন-মুসলিম বান্দাকে গোনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে নাজাত দান করবেন, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহ থেকে ক্ষমা পেতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো শবে কদরের এ ছোট্ট বিশেষ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুণনামাজের সেজদা ও তাশাহহুদে ক্ষমা পাওয়ার কুরআনি দোয়াগুলো পড়ার তাওফিক দান করুণপ্রত্যেক রোজাদার মুমিন মুসলমানকে লাইলাতুল ক্বদর পাওয়ার সৌভাগ্য দান করুনআমিন


Monday, April 11, 2022

ইসলামের আলোকে যাকাত

 ইসলামের আলোকে যাকাত

اَلْـحَـمْـدُ لِـلّٰـهِ رَبِّ الْـعٰـلَـمِـيْـنَ وَالـصَّـلٰوةُ وَالـسَّـلَامُ عَـلٰـي رَسُـوْلِـهِ الْـكَـرِيْـمِ وَعَـلٰـي اٰلِـهِ وَاَصْـحَـابِـهِ اَجْـمَـعِـيْـنَ- اَمَّـا بَـعْـدُ-

ভূমিকা  
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি অন্যতম স্তম্ভ¢। ঈমানসালাত ও সাওমের পর এর স্থান। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীর উপর এটা ফরজ করা হয়েছে। যাকাত পূর্ববর্তী নবী ও তাদের উ¤মতদের উপরও ফরজ ছিল। কেহ তা অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সালাতের সাথে সাথে যাকাতের কথা ৩৬ টি আয়াতে বলেছেন। তাই ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের গুরুত্ব¡ অপরিসীম।

যাকাতের সংজ্ঞা
যাকাত আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ প্রবৃদ্ধিপবিত্রতা ও বিশুদ্ধ ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় যাকাতের অর্থ হলো, “সম্পদশালী মুসলমানদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ (বছরের হিসাবান্তে উদ্ধৃত্ত সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ ২.৫%) আল্লাহ তাআলা ঘোষিত শরীয়াত নির্ধারিত খাতে কোন লাভ-লোকসান ও সুনাম কিংবা কোন বৈষয়িক স্বার্থ (উপকার) ব্যতীত সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে দান করা।

যাকাত পূর্ববর্তী শরীয়তেও ফরয ছিল (আঃ)
যাকাত শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যই ফরয নয়ইহা পূর্ববর্তী সকল শরীয়তেই ফরয ছিল। যেমন  মূসা (আঃ)-এর শরীয়তে যাকাত।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ﴿البقرة: ٨٣﴾
যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যেতোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে নাপিতা-মাতাআত্মীয়-স্বজনইয়াতীম ও দীন দরিদ্রের সাথে সদ্ব্যবহার করবেমানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবেসালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে।”-সূরা বাকারা ঃ ৮৩
লুত (আঃ)ইসহাক (আঃ)ইয়াকুব (আঃ)-এর উ¤মতের উপর যাকাত
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ ۖ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ ﴿الأنبياء: ٧٣﴾
আমি তাদেরকে নেতা করলাম। তারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আর আমি তাদের প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছি ভাল কাজ করতেসালাত আদায় করতেযাকাত আদায় করতে। আর তারা আমারই ইবাদতকারী।’’ -সূরা আম্বিয়া ঃ ৭৩
ইসমাঈল (আঃ)-এর সম্পর্কে বলা হয়েছে,
وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا ﴿مريم: ٥٥﴾
আর তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে আদেশ করতেন সালাতের ও নির্দেশ দিতেন যাকাত আদায়ের। আর তিনি তার প্রভুর কাছে পছন্দনীয় ছিলেন।’’ -সূরা মারইয়াম ঃ ৫৫
ঈসা (আঃ)-এর বাণী। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা,
وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا ﴿مريم: ٣١﴾
আমি যেখানেই থাকিতিনি আমাকে কল্যাণময় (বরকতময়) করেছেন। আর তিনি আমাকে উপদেশ দিয়েছেনযতদিন আমি জীবিত থাকি ততদিন সালাত এবং যাকাত আদায় করতে।’’ -সূরা মারইয়াম ঃ ৩১

উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য যাকাতের ফরযিয়্যত ও শরয়ী হুকুম
যাকাত ইসলামের বুনিয়াদী আমলের মধ্যে ফরয তথা অত্যাবশ্যকীয় একটি  বিষয় যা উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপর ফরয হয় ২য় হি ঃ রমাদান মাসে। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে বলেন,
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ ﴿البقرة: ٤٣﴾
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করযাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সাথে একত্রিত হয়ে রুকু কর (জামাতের সাথে সালাত আদায় কর)।’’ -সূরা বাকারা ঃ ৪৩
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿البقرة: ١١٠﴾
আর তোমরা সালাত কায়েম করযাকাত প্রদান কর এবং যে সকল নেক কাজ তোমরা নিজেদের কল্যাণে এখানে (দুনিয়ার জীবনে) করবেতার সবটুকুর প্রতিফল আল্লাহর কাছে (পরকালে) পাবে।’’ -সূরা বাকারা ঃ ১১০

ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা
ইসলামী সমাজের অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তির সম্পদ লাভ করার যেমন অধিকার আছেতেমনি তা শুধু নিজে ভোগ করার সুযোগ নেই। সকল সম্পদশালীর সম্পদে নিঃস্বদুস্থ ও দরিদ্রদেরও হক বা অধিকার দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ *لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ ﴿المعارج: ٢٤ -٢٥﴾
এবং তাদের ধন-সম্পদে নির্ধারিত হক আছে যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতের।’’-সূরা মায়ারিজ ঃ ২৪-২৫
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ ﴿الذاريات: ١٩﴾
এবং তাদের ধন-সম্পদেপ্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল।’’ -সূরা যারিয়াত ঃ ১৯
نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُم بَعْضًا سُخْرِيًّا ۗ وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ ﴿الزخرف: ٣٢﴾
“(তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে ?) আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের ওপর উন্নীত করেছিযাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করেআপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম।’’-সূরা যুখরুফ ঃ ৩২
এ উদ্দেশ্যে কুরআন মাজীদের অন্যতম গুরুত্ব¡পূর্ণ বুনিয়াদী নির্দেশ হলো ঃ
كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ ﴿الحشر: ۷
ধন যাতে শুধুমাত্র তোমাদের ধনীদের মধ্যেই পুঞ্জিভূত (আবর্তিত) হয়ে না থাকে।’’ -সূরা হাশর ঃ ৭
যাকাত না দেয়ার পরিণাম
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿التوبة: ٣٥-٣٤﴾
যারা স্বর্ণ ও রুপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন দোযখের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপাল (ললাট)পার্শ¦ ও পৃষ্ঠদেশে ছাপ (ছ্যাক) দেয়া হবে, (সেদিন বলা হবে) এটি তোমাদের সে সম্পদযা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছতার স্বাদ গ্রহণ কর।’’ -সূরা তাওবা ঃ ৩৫-৩৬
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُم بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ﴿آل‌عمران: ١٨٠﴾
আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-স¤পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচেছন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা করআল্লাহ সে স¤পর্কে জানেন।’’ -সূরা আলে ইমরান ঃ ১৮০
الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ ﴿فصلت: ٦﴾
যারা যাকাত দেয় না তারাই হলো পরকালে অবিশ্বাসী কাফের।’’-সূরা হা-মীম আস্সাজদা ঃ ৭
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ ۖ وَاللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ٢٦٨﴾
শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ¬ীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশি অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়সুবিজ্ঞ।’’ -সূরা বাক্বারা ঃ ২৬৮
الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۗ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا ﴿النساء: ٣٧﴾
যারা নিজেরা কার্পণ্য করে এবং অন্যকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সেসব  বিষয় যা আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন স্বীয় অনুগ্রহে বস্তুত তৈরি করে রেখেছি কাফেরদের জন্য অপমানজনক আযাব।’’ -সূরা নিসা ঃ ৩৭
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذ بِلِهْزِمَتَيْهِ - يَعْنِي بشدقيه - يَقُولُ: أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ". ثُمَّ تَلَا هَذِه الْآيَة: (وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ من فَضله) إِلَى آخر الْآيَة (رَوَاهُ البُخَارِيّ)
আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেনতারপর সে এর যাকাত আদায় করল নাকিয়ামতের দিন তার এ মালকে এমন বিষধর সাপের আকৃতিতে রূপান্তরিত করা হবে। তারপর এ সাপকে তার গলায় জড়িয়ে দেয়া হবে এবং সে ঐ মালদারের চোয়ালে দংশন করবে এবং বলতে থাকবে, “আমি তোমার সম্পদআমি তোমার সঞ্চিত ধন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (কুরআন মজীদের এ আয়াতটি) তিলাওয়াত করলেন: (যার অর্থ এরূপ) যারা কৃপণতা করে সে সব সম্পদ ব্যয়েযা আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অনুগ্রহ করেছেন---(আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।’’ -বুখারীমুসলিমইবন মাজাহমিশকাত ঃ ১৭৭৪
  
যাকাত আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর পদক্ষেপ
হাদীস শরীফে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ: ্রإِنَّك تَأتي قوما من أهل الْكتاب. فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. فَإِنْ هُمْ أطاعوا لذَلِك. فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ. فَإِنْ هم أطاعوا لذَلِك فأعلمهم أَن الله قد فرض عَلَيْهِم صَدَقَة تُؤْخَذ من أغنيائهم فَترد فِي فُقَرَائِهِمْ. فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ. فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَين الله حجابগ্ধ (مُتَّفق عَلَيْهِ)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুয়াজকে (রাঃ) ইয়ামেনের গভর্ণর হিসেবে পাঠিয়ে বললেন: তুমি কিতাবধারীদের এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছকাজেই প্রথমে তাদেরকে আহবান করবে এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করতে যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেইআর মুহাম্মদ (সাঃ)  আল্লাহর রাসূল। যদি তারা এটা মান্য করে তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দিয়েছেন। যদি একথাও তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে য়েআল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যাকাত ফরজ করেছেনযা ধনীদের নিকট থেকে আদায় করতঃ দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি একথাও তারা মেনে নেয় তবে তোমার উচিত হবে তাদের উত্তম সম্পদ পরিহার করা। তুমি মজলুমের বদ দুআ থেকে নিজেকে বাঁচাও। কেননাআল্লাহ ও মজলুম ব্যক্তির মাঝে কোন পর্দা থাকে না।’’ -বুখারীমুসলিমমিশকাত ঃ ১৭৭২

যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে আবূ বকর (রাঃ)-এর পদক্ষেপ 
(রিদ্দার যুদ্ধ )
হাদীস শরীফে এসেছে,
عن ابي هريرة (رض) قال لَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَاسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ بَعْدَهُ وكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ الْعَرَبِ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لأَبِي بَكْرٍ كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَمَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلاَّ بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللَّهِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو بَكْرٍ وَاللَّهِ لأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الزَّكَاةِ وَالصَّلاَةِ فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ وَاللَّهِ لَوْ مَنَعُونِي عِقَالاً كَانُوا يُؤَدُّونَهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهِ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَاللَّهِ مَا هُوَ إِلاَّ أَنْ رَأَيْتُ أَنَّ اللَّهَ قَدْ شَرَحَ صَدْرَ أَبِي بَكْرٍ لِلْقِتَالِ فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ-(بخاري, مسلم, ابوداؤد, نسائ, ترمذى)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিততিনি বলেন, “যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওফাত হল এবং আবূ বকর (রাঃ) এরপর খলীফা নির্বাচিত হলেনআর আরবের যারা (যাকাত প্রদানে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে) কাফির (মুরতাদ) হয়ে যাওয়ার তারা কাফির হয়ে গেল (তখন আবূ বকর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন)। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেনকিভাবে আপনি লোকদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করবেনঅথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “লোকেরা লা ইলাহা ইললালাহ-এর সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত আমাকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইললালাহ¬ বলবেতার জান ও মাল আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেলতবে তাঁর নিজের হক ব্যতীততাঁর হকের হিসাব তাঁরই উপর” (সুতরাং এ কথা জানার পর কিভাবে আপনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন?)। আবূ বকর (রাঃ) বললেন: আল্লাহর কসম! যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবেআমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব! কেননাযাকাত হল সম্পদের হক। আল্লাহর কসম! যারা উটের রশির যাকাত দিতেও অস্বীকার করবেযার যাকাত রাসূলের নিকট দেয়া হতআমি তাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করব। আবূ বকরের এমন প্রতিজ্ঞা শুনে উমর বললেনআল্লাহর কসম! আমি দেখতে পাচ্ছি যেআল্লাহ  তাআলা যুদ্ধের জন্য আবূ বকরের বক্ষকে উম্মুক্ত করে দিয়েছেনআমি বুঝতে পারলাম যেতার সিদ্ধান্ত সত্য।’’ -বুখারীমুসলিমআবূ দাঊদনাসাঈতিরমিযীমিশকাত ঃ ১৭৯০

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত
১। মুসলমান হওয়া।
২। নিসাব বা শরীয়াত নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।
৩। সম্পদ প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া।
৪। ঋণগ্রস্থ না হওয়া।
৫। সম্পদ এক বছর স্থায়ী হওয়া।
৬। জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া (পাগল বা বেহুস না হওয়া)।
৭। বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হওয়া।
৮। স্বাধীন হওয়া।

যাকাত ফরয হওয়ার সময়-সীমা
আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنِ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكَاة فِيهِ حَتَّى يحول عيه الْحَوْلُগ্ধ ( رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ)
যে লোক কোন ধন-সম্পদ লাভ করলোতা তার নিকট পূর্ণ একটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে তার ওপর যাকাত ফরয হবে না।’’ -তিরমিযীমিশকাত ঃ ১৭৮৭ 

নিসাবের পরিমাণ/ কি পরিমাণ সম্পদের যাকাত ফরজ
যদি কারো নিকট তার প্রয়োজনীয় সব খরচ বাদ দিয়ে সাড়ে বায়ান্ন (৫২ ১২ ) তোলা (ভরি) বা ৬১৩ গ্রাম রৌপ্য অথবা সাড়ে সাত (৭১২ ) তোলা (ভরি) বা ৮৮ গ্রাম স্বর্ণ অথবা সমপরিমান মূল্যের মাল বা নগদ অর্থ এক বছর যাবৎ জমা থাকেতার উপর যাকাত ফরজ। এটাকে শরীয়াতের পরিভাষায় নিসাব বলা হয়।

যেসকল বস্তুর যাকাত দিতে হয়
১। স্বর্ণ-রৌপ্য ও ইহার অলংকার। 
২। নগদ অর্থ-সম্পদ বা টাকা-পয়সা।
৩। ব্যবসার মাল বা জিনিস।
৪। গবাদী পশু।
৫। উৎপাদিত ফসলের যাকাত।
৬। খনিজ সম্পদ। যেমন স্বর্ণরৌপ্যতাম্রলৌহরংআরসেনিকতৈললবন ইত্যাদি। 
৭। ডিপিএসএসডিপিএসহজ্জ বীমামোহরানা বীমাপেনশন বীমাসহ বিভিন্ন প্রকারের বীমা প্রকল্পের।
৮। আধুনিক পদ্ধতিতে বিনিয়োগ বা মওজুদ অর্থ যেমন শেয়ার সার্টিফিকেটপ্রাইজবন্ডকোন কিছুর সিকিউরিটি বা যামানতডিপোজিটফিক্স ডিপোজিটচলতি হিসাবসঞ্চয়ী হিসাব ইত্যাদির যাকাত দিতে হবে।

কোন বস্তুর কি পরিমান যাকাত দিতে হবে
১। স্বর্ণরৌপ্য ও নগদ টাকার শতকরা ২.৫ ভাগ।
২। ব্যবসার মাল বা জিনিসের শতকরা ৪০ ভাগের ১ ভাগ। অথবা স্বর্ণরৌপ্য ও টাকার হিসাব করে শতকরা ২.৫ ভাগ।
৩। গবাদী পশু
ক। উট সর্বনি¤œ ৫টি হলে ১টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
খ। গরু-মহিষের সর্বনি¤œ ৩০টি হলে যাকাত দিতে হবে।
গ। ছাগলভেড়াদুম্বা সর্বনি¤œ ৪০টি হলে ১টি ছাগল অথবা ভেড়া অথবা দুম্বা যাকাত দিতে হবে।
৪। ফসলের যাকাত
ক। বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ।
খ। সেচের পানিতে উৎপন্ন ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ।

যে সকল বস্তুর যাকাত দিতে হবে না ঃ
১। বসবাসের বাড়ি।
২। ব্যবহারের গাড়ী।
৩। ব্যবহারের আসবাবপত্র।
৪। কলকারখানার যন্ত্রপাতি।
৫। ডেইরী ফার্মের পশু।
৬। যে সকল জিনিস ভাড়ায় খাটানো হয়। যেমন বাসরিক্সাট্যাক্সিট্রাকমাইক্রোডেকোরেশনের মালামাল ইত্যাদি তবে বাৎসরিক আয়ের উপর যাকাত দিতে হবে।
৭। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র ও অফিসের জিনিসপত্র।
৮। সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান।
৯। সরকারী মালিকানাভূক্ত নগদ অর্থ ও সোনা-রূপার যাকাত দিতে হবে না।
১০। শাক-সব্জি ও তরিতরকারীর কোন যাকাত দিতে হবে না।

যাদেরকে যাকাত দিতে হবে বা যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ
আল্লাহ তাআলা শুধু যাকাত আদায় করা ফরয এবং তার গুরুত্ব¡ ও ফযীলত বর্ণনা করেই শেষ করেন নিবরঞ্চ এ যাকাত কোথায় কোথায় ব্যয় করা হবে তার খাতসমূহও উল্লেখ করে দিয়েছেন। আল্লাহ পাকের বাণী,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ﴿التوبة: ٦٠﴾
নিশ্চয়ই এ সদকা (যাকাত) হলো কেবল ফকীরদের  এবং মিসকীনদের  জন্যেআর তাদের জন্যে যারা এ কাজের (যাকাত আদায় ও বন্টনের) জন্য নিয়োজিত কর্মচারী এবং তাদের জন্য যাদের ইসলামের পক্ষে মন জয় করা প্রয়োজন (নওমুসলিম)। আর তাদের (মুক্তির) জন্যে যারা দাসত্ব শৃঙ্খলে বন্দি,  ঋণগ্রস্থদের জন্যআল্লাহর পথে  ও মুসাফিরদের জন্যে। এটা হলো আল্লাহ  কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ বা নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞপ্রজ্ঞাময়।’’ -সূরা তাওবা ঃ ৬০

যাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না
১। পিতা-মাতাদাদা-দাদীনানা-নানী ও তাদের পিতা-মাতা।
২। সন্তান-সন্ততিনীচের দিক পর্যন্তযথা ঃ ছেলে-মেয়েপৌত্র-প্রপৌত্রীনাতী-নাতনী প্রভৃতি।
৩। সাহেবে নেসাব ধনী বা সচ্ছল ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থ দেয়া নাযায়েজ।
৪। অমুসলিমকে (কাফির-মুশরিককে) যাকাত দেয়া যাবে না।
৫। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৬। বনী হাশেম বংশধরদের তিন গোত্রকে যাকাত দেয়া যায়েজ নাই।  যেমন
     ক। আব্বাস (রাঃ) এর বংশধর। খ। হারেস (রাঃ) এর বংশধর। গ। আবূ তালেব (রাঃ) এর বংশধর।  
৭। এছাড়াও মুহাম্মদ (সাঃ) -এর পরিবার ও বংশধরকে যাকাত দেয়া হালাল নয়।
উল্লেখ্যযাদের ব্যয়ভার ও ভরণ-পোষণ বহন করা সরাসরি ও স্বাভাবিকভাবেই যাকাতদাতার ওপরতাদের ব্যতীত অন্যান্য ভাই-বোনভাতিজা-ভাগিনাচাচা-চাচীফুফা-ফুফি ও খালা-খালু প্রভৃতি নিকটাত্মীয়কে যাকাত দেয়া শুধু জায়েয নয় বরং উত্তমও বটে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ الضَّبِّيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِي الْقَرَابَةِ اثْنَتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ " (ابن ماجه)‏
“(সাধারণ) গরীব-মিসকীনদের দান (যাকাত) করা হলে তা হবে শুধু দান (যাকাত) করার সাওয়াব। আর নিকটাত্মীয়দেরকে দান (যাকাত) করা হলে একদিকে দানঅপরদিকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার উভয় সাওয়াব।’’ -ইবন মাজাহ ঃ ১৮৪৪

যাকাত প্রদানের ফায়দা বা ফযীলত
যাকাত সম্পদ বৃদ্ধি করে। আল্লাহ  তাআলা বলেন,
وَمَا آتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُو عِندَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ ﴿الروم: ٣٩﴾
আর তোমরা মানুষের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য যে বৃদ্ধি (সুদ) প্রদান কর তা আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যে যাকাত প্রদান করমূলত সেই যাকাত দানকারীরাই প্রকৃতপক্ষে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করে।’’ -সূরা রুম ঃ ৩৯

যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে
আল্লাহ  তাআলা বলেন,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿التوبة: ١٠٣﴾
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দুআ করনিঃসন্দেহে তোমার দুআ তাদের জন্য সান্তনাস্বরূপ। বস্তুত আল্লাহ সবকিছুই শোনেনজানেন।’’ -সূরা তাওবাহ্ ঃ ১০৩
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَفْرِضِ الزَّكَاةَ إِلاَّ لِيُطَيِّبَ مَا بَقِيَ مِنْ أَمْوَالِكُمْ (رَوَاهُ أَبُو دَاوُد)
আল্লাহ  পাক তো যাকাত এজন্যই ফরয করেছেনযাতে তোমাদের অবশিষ্ট মাল পাক-পবিত্র হয়ে যায়।’’ -আবূ দাঊদমিশকাত ঃ ১৭৮১

সম্পদের যাবতীয় অকল্যাণ ও অমঙ্গল দূর হয় ঃ
হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَرَأَيْتَ إِذَا أَدَّى رَجُلٌ زَكَاةَ مَالِهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ أَدَّى زَكَاةَ مَالِهِ، فَقَدْ ذَهَبَ عَنْهُ شَرُّهُগ্ধ(المعجم الاوسط)
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “এক ব্যক্তি বললহে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি যদি তার মালের যাকাত আদায় করে তাহলে তার ফায়দা বা উপকারীতা কীতখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত প্রদান করেতার সম্পদের অকল্যাণ ও অমঙ্গল দূর হয়ে যায়।’’ -আলমুজামুল আওসাত ঃ ১৫৭৯

আখিরাতে রয়েছে আল্লাহ তাআলার মহা পুরস্কার
আল্লাহ  তাআলা বলেছেন,
يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ* إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿البقرة: ٢٧٧-٢٧٦﴾
আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছেসৎকাজ করেছেসালাত প্রতিষ্ঠা করেছে এবং যাকাত প্রদান করেছেতাদের জন্যে তাদের পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তাঁরা দুঃখিত হবে না।’’ -সূরা বাক্বারা ঃ ২৭৬-২৭৭

যাকাত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম
আনাস (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ فَارَقَ الدُّنْيَا عَلَى الْإِخْلَاصِ لِلَّهِ وَحْدَهُ، وَعِبَادَتِهِ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، مَاتَ وَاللَّهُ عَنْهُ رَاضٍগ্ধ
আল্লাহর প্রতি পরম আন্তরিকতা ও নিষ্ঠাতাঁর শিরকমুক্ত ইবাদতসালাত কায়েম ও যাকাত দেয়া অবস্থায় যেলোক দুনিয়া ত্যাগ করলসে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্ত হিসেবেই দুনিয়া ছেড়ে গেল।’’ -ইবন মাজাহ ঃ ৭০

জাতীয় অর্থ ব্যবস্থায় যাকাতের গুরুত্ব¡
ক। সামাজিক গুরুত্ব¡
            ১। দারিদ্র লাঘব।
            ২। ভাতৃত্ব বোধের উ¤েমষ।
            ৩। সহানুভূতি সৃষ্টি।
            ৪। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর।
            ৫। সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি।
খ। ধর্মীয় গুরুত্ব¡
            ১। সম্পদের বৃদ্ধিপবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা।
            ২। আল্লাহর নির্দেশ পালন।
            ৩। ঈমানের পরিচয়।
            ৪। আত্মিক শান্তি।
            ৫। পরকালীন মুক্তি।
গ। নৈতিক গুরুত্ব¡
            ১। রাষ্ট্র্রীয় আয়।
            ২। অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা।
            ৩। অর্থনৈতিক অনটন বিমোচন।
            ৪। কর্মসংস্থান।
            ৫। ঋণমুক্তি।
            ৬। জনহিতকর কার্য।

যাকাত’ ও ট্যাক্স বা কর’-এর মধ্যে প্রার্থক্য
যাকাত আদায় করতে গিয়ে আমাদের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দেয়। যেমন যারা রাষ্ট্র্রীয়ভাবে কর বা ট্যাক্স দিয়ে থাকেতাদের যাকাত দিতে হবে কেনঅথবা আদায়কৃত কর বা ট্যাক্সের অংশ যাকাতের অংশ হিসেবে আদায় হবে না কেনইত্যাদি। এ বিষয়ে আমাদের ভালোভাবে জেনে নেয়া প্রয়োজন যেযাকাত ও কর বা ট্যাক্স কখনো এক জিনিস নয়। বরং মৌলিক ধারণা ও নৈতিক মর্যাদার দিক থেকে উভয়ের মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেমন
১। প্রকৃতপক্ষে যাকাত একটা অর্থনৈতিক ইবাদত। আর কর বা ট্যাক্স হলো রাষ্ট্র্রীয় আইন।
২। যাকাতের টাকা সরকার গ্রহণের ব্যবস্থা করলেও তা আল্লাহ  তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত আট শ্রেণীর বাহিরে খরচ করা যায় নাকিন্তু কর বা ট্যাক্সের টাকা ইচ্ছা মত ব্যয় করা যায়। যা দ্বারা রাষ্ট্র্রের সকল নাগরিকই সুবিধা ভোগ করতে পারে।
৩। যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিতকেউ এতে কম বেশ করতে পারবে না। আজ থেকে প্রায় পনের শ’ বছর পূর্বে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কর্তৃক যে হার নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা অপরিবর্তনীয়। কিন্তু কর বা ট্যাক্সের পরিমাণ সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কেউ কম বা বেশী করার অধিকার রাখেন।
৪। যাকাত মূলত শুধু মুসলমানদের ওপর ফরয যা তাদের ঈমান ও আমলের সাথে সম্পৃক্ত। পক্ষান্তরে কর বা ট্যাক্স হলো মুসলিম-অমুসলিম রাষ্ট্রের সকল নাগরিক তা পরিশোধ করতে বাধ্য। যদি সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে তা গ্রহণের ব্যবস্থা করেন।

যাকাতের কিছু মাসয়ালা (বিধান) ঃ
১। কোন ব্যক্তির নিকট কিছু সোনাকিছু রুপাকিছু নগদ টাকা ও কিছু ব্যবসার মাল থাকলেসব মিলিয়ে যদি সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা যার বর্তমান (২০১৪ ইং) বাজার মূল্য ৬৫ হাজার টাকার সমান হয়তাহলে যাকাত দিতে হবে।
২। যৌথ মালিকানাধীন মিল-ফ্যাক্টরীর প্রত্যেক শেয়ারের মূল্য যদি নিসাব পরিমাণ হয়তবে প্রত্যেককে আলাদাভাবে যাকাত দিতে হবে।
৩। কেউ কাউকে নিসাব পরিমাণ ঋন দিলে বছর শেষে ঋণদাতাই যাকাত দিবেগ্রহীতা নয়।
৪। কোম্পানীর শেয়ার ও ব্যাংকে রাখা আমানতের (ডিপোজিট) যাকাত দিতে হবেযদি তা নিসাব পরিমান হয়।
৫। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা উঠানোর পর যাকাত দিতে হবে। পিছনের বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে না।
৬। যাকাত গ্রহণকারীকে নগদ টাকার পরিবর্তে অন্য কোন বস্তু প্রদান করলেও যাকাত আদায় হবে।
৭। ভাই-বোনভাতিজা-ভাতিজিভগ্নিপতিভাগিনা-ভাগ্নিচাচা-চাচীখালা-খালুফুফা-ফুফুমামা-মামীশশুর-শাশুড়ীজামাইসৎ পিতাসৎ মাতা প্রমুখ লোক যদি গরীব হয়তাদের যাকাত দেয়া যাবে এবং উত্তম। তবে যাকাত দেয়ার সময় এটা যাকাতের টাকা বা মাল। একথার বলার প্রয়োজন নেই।
৮। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গরীব ও ইয়াতীম ছাত্রদের পড়া-লেখা ও খাওয়া-পড়ার জন্য যাকাতের টাকা দেয়া উত্তম।
৯। বাসা-বাড়ীতে কাজ কর্মের যেসব চাকর-চাকরানীদাই প্রভৃতি থাকেতাদের কাজের পারিশ্রমিক ও বেতন হিসেবে যাকাতের টাকা ও সম্পদ দেয়া যাবে না। তবে তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে।
১০। যাকাতের জন্য কোন মাস নির্দিষ্ট নাই। যে মাসে নিসাব পূর্ণ হবে পরবর্তী বছর সে মাসেই যাকাত দেয়া ফরজ হবে।

উপসংহার
নিশ্চয় যাকাত সম্পদকে পবিত্র ও বরকতময় (বৃদ্ধি) করে। যাকাত আত্মার পবিত্রতা সাধন করে এবং কৃপণতা থেকে মুক্ত করে উদারতা ও বদান্যতায় পরিপূর্ণ করে। আর যাকাত দারিদ্রতা দূরীভূত করে এবং তা ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি করার একটি মাধ্যম। তাই প্রতি বছর ইসলামের নির্ধারিত নীতি অনুযায়ী যাকাতের হকদারদের (প্রাপ্যদের) মধ্যে সঠিকভাবে যাকাত বন্টন করা আমাদের কর্তব্য।

লাইলাতুল ক্বদরে যে সকল দোয়া সমূহ আমরা পড়তে পারি

ফজিলাতের রাত লাইলাতুল কদর । এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার মুক্তির জন্য নাজিল করেছেন কুরআনুল কারিম । আর কুরআনুল কারিমে রয়েছে ক্ষমা প্রার্...