ফজিলাতের রাত লাইলাতুল কদর। এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার মুক্তির জন্য নাজিল
করেছেন কুরআনুল কারিম। আর কুরআনুল কারিমে রয়েছে
ক্ষমা প্রার্থনার অনেক দোয়া। আবার এ
রাতে বিশেষ দোয়া পড়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ক্ষমা প্রার্থনার সে দোয়াগুলো আজকে আমরা শিখব, ইনশাআল্লাহ।
লাইলাতুল ক্বদরের বিশেষ দোয়া
রমজান মাসের শেষ দশকের
বিজোড় রাতগুলোর যে কোনো একটি রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ সংঘটিত
হয়। রোজাদার মুমিন মুসলমান এ রাত
পাওয়ার জন্য শেষ দশক ইতেকাফে অতিবাহিত করেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমৃত্যু ইতেকাফ করেছেন। এ রাতে বিশেষ একটি দোয়া পড়ার কথা বলেছেন। তাহলো-
আম্মাজান হজরত আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল!
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল ক্বদর কোন রাতে
হবে তা জানতে পারি,
তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-
اللّٰهُمَّ إِنَّكَ
عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।(মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
সুতরাং প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। আর এই হাদীসের আলোকে ক্ষমা প্রার্থণার যে দোয়াগুলো আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন সেগুলো বেশি বেশি পড়া।এমন কিছু দোয়া নিচে উল্লেখ করা হল-
পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ক্ষমার দোয়া সমূহ
ক্ষমা প্রার্থনার জন্য
মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। যা নামাজের সেজদা,
তাশাহহুদসহ সব সময় পড়া যায়। দোয়াগুলো হলো-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرّٰاحِمِيْنَ
অনুবাদ: ‘হে আমার
প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ
خَيْرُ الرّٰاحِمِيْنَ
অনুবাদ: 'হে
আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (সুরা
মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
অনুবাদ: '(হে আমার)
প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।' (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)
رَبَّنَاۤ إِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا
وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অনুবাদ: হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا
وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অনুবাদ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ
يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
অনুবাদ: হে আমাদের প্রভু!
যেদিন হিসাব কায়েম হবে,
সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে
ক্ষমা কর।'
(সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ
الْمَصِيْرُ
অনুবাদ: ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَالاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ
وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْلَنَا وَارْحَمْنَاۤ أَنْتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى
الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
অনুবাদ: 'হে
আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো
না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং
কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর। ' (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ
سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
অনুবাদ: ‘হে
আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ
করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ
أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
অনুবাদ: ‘হে
আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ
করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং
অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুণ।' (সুরা
আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا
سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
অনুবাদ: 'হে
আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান
করুন।'
(সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের
উচিত, লাইলাতুল ক্বদরে প্রিয় নবি ঘোষিত বিশেষ দোয়াসহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ক্ষমা
প্রার্থনার দোয়াগুলো সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর
নিজেদের গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি পড়া। আর তাতেই মহান আল্লাহ রোজাদার মুমিন-মুসলিম বান্দাকে গোনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে নাজাত
দান করবেন, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম
উম্মাহকে গোনাহ থেকে ক্ষমা পেতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
শেখানো শবে কদরের এ ছোট্ট বিশেষ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুণ। নামাজের সেজদা ও তাশাহহুদে ক্ষমা পাওয়ার কুরআনি দোয়াগুলো
পড়ার তাওফিক দান করুণ। প্রত্যেক রোজাদার মুমিন
মুসলমানকে লাইলাতুল ক্বদর পাওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment